ইরিসিপেলাস: Erysipelas
ইরিসিপেলাস: Erysipelas
কারণ-
এটি
খুব ভয়ানক রোগ। দেহের কোন অংশ কেটে, হেজে বা ফেটে গেলে
সেই স্থান দিয়ে Staphylococcus ও Streptococcus প্রভৃতি বীজাণু প্রবেশ করে
এবং তার ফলে এই রোগ হয়। মুখমণ্ডলে বেশি হয়। দেহের ত্বক এর ফলে খুব ফুলে ওঠে ও লাল
হয়ে যায়। তার সঙ্গে থাকে খুব যন্ত্রণা ও টাটানি।
অনেক সমর এই রোগ থেকে ক্ষতে পচনক্রিয়া শুরু হয়। তাকে বলা হয় পচনশীল বা Gangrenous ইরিসিপেলাস রোগ। দ্রুত রোগের চিকিৎসা না হলে অবস্থা খারাপ হয় ও তখন অপারেশন করতে হতে পারে। শেষ পর্যন্ত রোগী মারা যাবার ভয় থাকে -যদি চিকিৎসা না হয়।
লক্ষণ-
1. প্রথম অবস্থায় ক্ষতস্থান ফুলে ওঠে, চর্ম লাল হয়। তারপর প জমে ও টাটানি ব্যথা প্রভৃতি বেড়ে যেতে
থাকে।
2. গা শীত শীত করে, জ্বর হয়, অস্বাচ্ছন্দ্য অনুভব
করে। মাথা ধরা, গা-হাত-পায়ে ব্যথা হতে পারে।
জ্বরের অন্যান্য লক্ষণাদি দেখা দিয়ে থাকে।
3. ঘায়ে পজ জমলে স্থানটি খুব
ফুলে যায় ও প্রবল কম্প ও বেশি জ্বরও হতে পারে। আক্রান্ত স্থানে প্রবল ব্যথা, নিকটবর্তী লিমফ গ্রন্থিগুলি ফুলে ওঠা প্রভৃতি দেখা যায়।
আক্রান্ত স্থানটি গরম হয়।
4. জ্বর বেশি হলে বমি, প্রলাপ প্রভৃতিও হতে পারে।
5. এরপরে পুজ শরীরে সঞ্চিত হয় ও
রক্তের মাধ্যমে দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তার ফলে হৃৎপিন্ডের Endocarditis, ফুসফুসে প্রদাহ, কিডনিতে প্রদাহ প্রভৃতি নানা ধরনের কুলক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে।
6. দ্রুত চিকিৎসা না হলে রোগ
ক্রমাগত খারাপের দিকে যেতে থাকে ও শেষ পর্যন্ত Toxaemia-র লক্ষণাদি দেখা যায়। খিচুনি, আচ্ছন্নভাব, মোহ এবং মৃত্যু
পর্যন্ত এতে দেখা যায়।
7. মুখে হলে ব্রেণ আক্তমণ করতে
পারে ও অবস্থা জটিল হয়।
জটিল উপসর্গে (Complications)-
1. ব্রেণের ওপরের আবরণ বা মেনিন-জিস
আক্রান্ত হতে পারে।
2. হৃৎপিণ্ড আক্রান্ত হতে পারে ও
Endocarditis হতে পারে।
3. প্রবল Toxaemia হতে পারে। রক্তে শ্বেতকণিকা বৃদ্ধি পায়।
4. ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে পরে
প্রদাহ হতে পারে।
5. কিডনিতে প্রদাহ বা Nephritis হতে পারে এবং মুত্র কমে যায় বা মুত্রবন্ধ ভাব
দেখা দেয়।
6. প্রলাপ. খিচুনি, তড়কা, মোহ হতে পারে।
রোগ নির্ণয় –
1. দেহের কোন স্থানে কাটা, ঘা, প্রদাহ, ফোলা, লাল হওয়া, যন্ত্রণা প্রভৃতি থাকবেই।
2. দেহে পজ সঞ্চয় ও তারপর জ্বর
প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়।
3. Neutrophil বৃদ্ধি পায়, Lymphocyte, Monocyte, Eosinophil কমে যায় Acute অবস্থায়।
চিকিৎসা
1) গাত্রত্বক প্রদাহযুক্ত, আক্রান্ত স্থান প্রদাহযুক্ত, লাল, অল্প ফোলা, উত্তাপ, মাথা ব্যথা, পিপাসা, প্রলাপ, খিচুনি প্রভৃতিতে- 'বেলেডোনা। ১, ৩।
2) সর্বাঙ্গে হল বোঁধার মতো
ব্যথা, ফোস্কা, রস নিঃসরণ, জ্বালা, বাঁ দিকে প্রথমে শুরু হলে-রাস টক্স ৬, ৩০।
3) রসপূর্ণ, উত্তপ্ত, জ্বালাকর ফোস্কা, ফোস্কা খুব ফোলা,
চুলকানি, হুল ফোটার মত ব্যথা,
ফোলা
খুব বেশি-এপিস্ মেল ৩, ৬ বা এপিয়াম ভাইরাস
৬।
4) বৃদ্ধদের পীড়া, স্মৃতিলোপ-অ্যামন কার্ব ৩
5) রসপূর্ণ গুটিকা' রস যেখানে লাগে হেজে যায়-ক্যান্থারিস ৩।
6) পুজ উৎপত্তি হলে-হিপার সালফার
৩৪।
7) সামান্য রোগের প্রথম
অবস্থায়-চায়না ১০।
8) বার বার রোগের আক্রমণ, বিশেষ করে মুখমণ্ডল-গ্র্যাফাইটিস ৬।
9) পচন শুরু হলে-ক্রোটেলাস ৬।
10) উজ্জ্বল লালবর্ণের প্রদাহ, অসহ্য জ্বালা লক্ষণে,
অ্যাল্বাক্সিনাম
৩৪, ২০০।
11) সাংঘাতিক বিসস, অত্যধিক গাত্র উত্তাপ,
অস্থিরত।, রক্তদৃষ্টি লক্ষণে,
এচিনেসিয়া
মাদার ৩।
12) জ্বালাকর দাহ, ফোস্কা, রস পড়া-ক্যান্থারিস।
13) পূজের সম্ভাবনায় আর্সেনিক ৬
বা কার্বোভেজ, ৬।
14) পচনের শুরু হলে. লাকেসিস ৬।
15) এক জায়গায় ফোস্কা ভাল হয়ে
অন্য জায়গায় শুরু হলে-পালসেটিলা ৬, ৩০।
16) বিস্তৃতি রোধ করতে হিপার
সালফার ২০ চূর্ণ।
17) বায়োকেমিক -প্রথম অবস্থায়
ফেরাম ফস্ ৩x, ৬x, ৩০। ৩০ লাগানো (বাহ্যিক)।
18) এরপর নেট্রাম সাল্ল্ফ ৬৪, ১২৪ শ্রেষ্ঠ ঔষধ।
19) এছাড়া ক্যালি মিউর ৩৪, ৬৪ এবং ক্যালি সালফ ৬x,
১২x উপকারী।
আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা
1. জ্বর অবস্থায় পথ্য দিতে হবে
জয়ের মতো- আগে বলা হয়েছে।
2. জয় ছেড়ে গেলে মাছের ঝোল ভাত।
গব্য ঘৃতে ভাজা লুচি (কালজিরাসহ) বা কচুরী উপকারী।
3. টক, দই প্রভৃতি খাদ্য এ রোগে বিশেষভাবে নিষিদ্ধ।
ডাঃ এসএন পান্ডেএর হোমওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স গাইড থেকে হুবহু সংকলিত।