হামজ্বর: Measles
হামজ্বর: Measles
হামজ্বরের কারণ
এক ধরনের ভাইরাস জাতীয় বীজাণু থেকে এই রোগ হয়। প্রধানত: শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। 3-4 বছর বয়স
থেকে 15-20
বছর পর্যন্ত শিশু ও কিশোরদের এটি বেশি হয়।
এটি খুব ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ। রোগ ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকে আক্রান্ত হয়। বাড়ির
একটি শিশুর হলে অন্যদের মধ্যেও তাই বাড়ির কোনও শিশু আক্রান্ত হলে তাকে পৃথক ঘরে
রাখা অবশ্য কর্তব্য। যুবকদের কদাচিত এই রোগ হয়। ভাইরাস বাতাসের
মাঝ দিয়েও ছড়াতে পারে বলে, এত বেশী শিশুরা এতে আক্রান্ত হতে পারে।
হামজ্বরের লক্ষণ
(1) শীতে শেষে এবং বসন্তকালের শুরুতে এই রোগ
বেশি হতে দেখা যায়। ইনকুবেশনের সময় 7 থেকে 20 দিন।
(2) প্রথমে সর্দি, কাশি, হাঁচি শুরু হয়। তবে 2-1 দিনে জ্বর ছাড়ে না। 2-3 দিনের মধ্যে গায়ে উদ্ভেদ বা ঘামাচির মতো Rash বের
হতে থাকে। তখন একে হাম বলে বুঝতে পারা যায়।
(3) গায়ে হাম বের হলে জ্বর ধীরে ধীরে কমে যায়। 3-4 দিন পরে হাম সেরে যায় ও উদ্ভেদ বসে যায়।
(4) অনেক সময় জ্বর হঠাৎ শুরু হয় এবং 102-103 ডিগ্রী পর্যন্ত ওঠে। সেই সময় রোগী প্রলাপ বকে এবং তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
(5) অনেক সময় ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়ার লক্ষণাদি এই সঙ্গে
প্রকাশ পায়। তখন রোগীর জীবন আশঙ্কা বা প্রাণসংশয় হতে পারে।
হামজ্বরের প্রকারভেদ
লক্ষণ অনুযায়ী হামকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। তা হলো-
(1) সরল হাম বা Simple Measles-জ্বর অল্প হয়। হাম বের হয়। হাম বের হলে জ্বর কমে যায় ও ছেড়ে যায় এবং ধীরে
ধীরে সেরে যায়।
(2) কঠিন বা Acute Measles-হঠাৎ জ্বর হয় ও বেশি জ্বর হয়। প্রচুর ঘাম হয় ও জ্বর চলতে থাকে। জ্বর সহজে
কমে না-ধীরে ধীরে কমে ও হাম সারতে দেরী হয়। এই সঙ্গে প্রলাপ বকা, চোখের প্রদাহ, কানে পূজ ইত্যাদি নানা লক্ষণ প্রকাশ
পায়। রক্ত আমাশয় প্রভৃতিও হতে পারে এই সঙ্গে।
(3) ব্রঙ্কো-নিউমোনিয়া হাম -এই
জ্বরে স্বরভঙ্গ, বুক, ফুসফুস, ব্রঙ্কাস প্রভৃতি আক্রান্ত হয় ও প্রবল জ্বর চলতে থাকে। শ্বাসকষ্ট হয়।
রোগীর অবস্থা ভয়াবহ হয় এবং রোগী মারা যেতে পারে।
জটিল উপসর্গ (Complication)
(1) ত্বকের নিচে অল্প পুঁজ জমতে পারে। তার ফলে শিশুরা খুব কষ্ট পায়।
(2) ব্রঙ্কো-নিউমোনিয়া, বুকের মধ্যে ঘড় ঘড় করা, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি উপসর্গ হয় ও প্রবল জ্বর চলতে থাকে।
(3) অনেক সময় চোখ আক্রান্ত হতে পারে।
(4) কান আক্রান্ত হয়ে Otitis Media হতে পারে।
হামজ্বরের রোগ নির্ণয়
গায়ে হামের উদ্ভেদ থেকে রোগ চেনা যায়। অন্য রোগের উদ্ভেদের সঙ্গে এর পার্থক্য আছে। সারা গায়ে বের হয়-ঘামাচির মতো ছোট ছোট হয়। হাম সব বেরিয়ে গেলে প্রায়ই জ্বর কমে-একমাত্র ব্রঙ্কো-নিউমোনিক ছাড়া।
হামজ্বরের চিকিৎসা
1) প্রাথমিক স্তর-অ্যাকোনাইট ৩x, গরম জলে স্পঞ্জ।
2) হাম বের হলে-পালসেটিলা, জেলসিমিয়াম, ইউফ্রেসিয়া।
3) হাম বের না হলে-বেলেডোনা, অ্যামন্ কার্ব', স্পঞ্জ করা।
4) হাম বসে গেলে -রাইয়ো, জেলস, অ্যামন কার্ব', জিঙ্গাম, সালফার।
5) গুটি বসে গেলে-ক্যালি সালফ ৩৪-১২৪।
6) ফেরাম্ ফস্ ৩৪, ৬x-প্রথম অবস্থা, জ্বর, রক্তাধিক্য।
7) ক্যালি মিউর ৩x, ৬x-দ্বিতীয় অবস্থা, কাশি, গ্রন্থি স্ফীতি প্রভৃতি।
8) ক্যালি মিউর ৩x, ৬x-দ্বিতীয় অবস্থা, কাশি, গ্রন্থি স্ফীতি প্রভৃতি।
9) অ্যান্টিম টার্ট বা ফসফরাস ৬-বায়ুনলী বা ফুসফুস আক্রান্ত হলে।
10) বেলেডোনা ৩, ৬-নাড়ি কঠিন, চোখ-মুখ লাল, স্বরভঙ্গ, মাথা গরম, তন্দ্রা, হঠাৎ চমকে ওঠা।
11) ক্যাম্ফার, মাদার-সর্বাঙ্গ শীতল, নীলবর্ণ', অত্যন্ত অবসন্ন ভাব, পতন অবস্থা।
12) আর্সেনিক ৬, ৩০-কৃষ্ণবর্ণ হাম, পাকাশয়ের গোলমাল।
13) ভিরেট্রাম ভির, মাদার ২৪- হাম বের হতে দেরী, তড়কা, প্রলাপ, প্রবল জুর প্রভৃতিতে।
14) ক্যালি বাইক্রোম বিচূর্ণ-কাশি, ব্রঙ্কাইটিস্।
15) ব্রায়োনিয়া ৩০, ৩০-হাম বসে যাওয়া, শুকনো কাশি, জ্বর।
16) জেলুস্ ১০, ৩-হাম বসে গিয়ে প্রবল জ্বর, সর্দি প্রভৃতিতে।
17) পাল্সেটিলা ৩, ৬-এটি হামের একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। কাশি, গলা ঘড় ঘড় করা, নাক দিয়ে শ্লেষ্মা বা রক্তস্রাব, উদরাময়, পিপাসা বেশি থাকে না।
আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা
1. হাম
খুব ছোঁয়াচে রোগ-একথা সব সময় মনে রাখতে হবে। রোগীকে পৃথক ঘরে রাখতে হবে। শিশুদের ঐ
ঘরে আসতে দেওয়া উচিত নয়।
প্রতিষেধক -মর্বি লিনাম ৩০ বা ২০০ রোজ একবার বা পালসেটিল। ৩ সেবন শ্রেষ্ঠ
প্রতিষেধক।
2. রোগীকে
সব সময় শয্যায় শুইয়ে রাখা কর্তব্য। মশারীর মধ্যে রাখ্য উচিত।
3. প্রথমে তরল খাদ্য। তবে লঘুপাচ্য, মাছ,
ডিমের পোচ বা হাফবয়েল প্রভৃতি প্রোটিন খাদ্য দিতে হবে।
4. যদি জ্বর চলতে থাকে ও হাম ভালভাবে বের না হয়, তাহলে তা খারাপ।
রোগীকে গরম জল দিয়ে স্পঞ্জ করতে হবে।
5. সাগু, বার্লি, ফলের
রস, (মিষ্টি রস) গ্লুকোজ প্রভৃতি পথ্য। টক নিষিদ্ধ।
6. উচ্ছে পাতার রস খাওয়ানো ভাল-অথবা উচ্ছে সিন্ধ।
7. সর্দি বা নিউমোনিয়া না থাকলে চিরতা ভেজানো জল খাওয়ালে ভাল হয়।
ডাঃ এসএন পান্ডে এর হোমওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স গাইড থেকে হুবহু সংকলিত।