জল বসন্ত-Chicken Pox

 জল বসন্ত (Chicken Pox)

জল বসন্ত-Chicken Pox

কারণ

এই রোগের কারণ এক ধরণের ভাইরাস-তাদের নাম Varicella Virus বা চিকেন পক্স ভাইরাস। এগুলি ভীষণ ছোঁয়াচে। এই রোগ শীতকালের শেষদিকে ও বসন্তকালে বেশি হয়। এই রোগের আবির্ভাব হলে, অনেক সময় তা Epidemic বা Endemic ভাবে দেখা দিয়ে থাকে। এই রোগ খুব মারাত্মক নয়-তবে এটি যে কষ্টদায়ক রোগ সন্দেহ নাই।

লক্ষণ। লক্ষণ অনুযায়ী Chicken Pox-কে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। তাহলো-

1) Simple Type: এটি অল্প জ্বর হয়ে সারা গায়ে গুটি বের হয়। তবে খুব বেশি বের হয় না। জ্বর অল্প হয় ও বেরিয়ে গেলে জ্বর ছেড়ে যায়। জ্বর হয় 98-100 ডিগ্রী। বের হবার পর শুকোবার আগে আবার একটু জ্বর আসতে পারে।

2) Acute Type: এটি বেশি কষ্টদায়ক এবং এতে নানা লক্ষণ প্রকাশ পায়।

a) জুজুর 103 থেকে 104 ডিগ্রী হয়। রোগী প্রলাপ বকতে পারে বা আচ্ছন্নের মত পড়ে থাকে।

b) জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে গা, হাত-পা, কোমরে ভীষণ ব্যথা হতে থাকে ও কষ্ট হয়।

c) জ্বর আসার সময় কম্প হয়, জুর সহজে ছাড়তে চায় না।

d) 2-4 দিন পর সারা গায়ে জল বসন্ত বের হয়। এগুলি আসল গুটি বসন্তের থেকে বড় হয়। এগুলি সুক্ষ্ম অগ্রভাগযুক্ত হয়ে থাকে।

e) গুটি বের হলে জ্বর কমে যায়।

f) অনেক সময় শুকোবার আগে জ্বর বৃদ্ধি পায় ও রোগী কষ্ট পায়। গুটিগুলিতে প্রথমে জল জমে, পরে তা শুকিয়ে আসে।

g) গুটি গলে গেলে তাতে ঘা ও খুব ব্যথা হয়। যাতে ঘা না হয়, সেদিকে অবশ্য দৃষ্টি রাখা কর্তব্য।

h) অনেক সময় বুকের কর্মপ্লিকেশনও দেখা দিতে পারে বলে জানা যায়। এরূপ হলে জুর সহজে কমতে চায় না।

জটিল অবস্থাদি (Complications)

1) চর্মে স্ট্যাফাইলো প্রভৃতি কক্কাসের সেকেন্ডারী আক্রমণ ঘটতে পারে। তাতে থা হয় ও সহজে শুকাতে চায় না।

2) অনেক সময় ব্রতেঙ্গা-নিউমোনিয়া হয় -তাহলে রোগ কঠিন হয়। রোগী পার। শিশুদের থেকে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি বোঁশ হয়।

3) অনেক সময় Virus, Brain-কে আক্রমণ করে Encephalitis ঘটাতে পারে। রোগী বেশী জার প্রলাপ বকতে পারে। এগুলি সাবধানে দেখা কর্তব্য।

রোগ নির্ণয়-জল বসন্ত ও আসল বা গুটি বসন্ত এই দুটির মধ্যে রোগ নির্ণয়ে ভুল হতে পারে। এই জন্য এদের পার্থক্যগুলো জানা কর্তব্য। তাহলে সহজে রোগ নির্ণয় করা যায়।

জল বসন্ত

আসল গুটি বসন্ত

1. সারা দেহে কিছু কিছু গুটি বের হয়, তবে হাতে পায়ে কম। মুখেও কম।

 1. হাত পা ও মুখেই বেশি গুটি বের হয়।

2. গুটিগুলি ফোস্কার মত ও বড় হয়।

 2. গুটিগুলি কিছু, ছোট হয়।

3. গুটিতে রূপের মত পদার্থ জমে।

 3. গুটিতে পুঁজের মত পদার্থ জমে।

4. দাগ সহজে মিলিয়ে যায়।

 4. দাগ গর্ত হয়ে যায় সহজে মেলায় না।

5. জ্বর কম হয় ও প্রায়ই গুটি বের হলে ছেড়ে যায়।

 5. জ্বর বেশি হয় এবং অনেক দিন চলে।

6. ঘা প্রায়ই হয় না কেবল গলে গেলে হয়।

 6. সব গুটিগুলি থেকেই ঘায়ের মতো গত' হয়।

7. এটি প্রায়ই মারাত্মক নয়।

 7. এটি মারাত্মক।

8. দ্রুত আরোগ্য হয়

 8. আরোগ্য হতে বেশি সময় লাগে।

প্রতিষেধক:

1) পাড়ায়-বা বাড়িতে এই রোগ শুরু হলে তার শ্রেষ্ঠ প্রতিষেধক ঔষধ হলো ম্যালেনজিনাম ৩০ বা ২০০ সেবন।

2) প্রথম অবস্থার প্রবল জ্বর প্রভৃতি লক্ষণে দিতে হবে, অ্যাকোনাইট ৩।

3) রোগ শুরু হয়ে গেলে, রাসটক্স ৩ এই রোগের শ্রেষ্ঠ মহৌষধ বলা যায়।

4) যদি রাসটক্স ব্যর্থ হয় তা হলে দিতে হবে অ্যান্টিম টার্ট ৬ অথবা এপিস্ মেল ৬

5) পা ব্যথা, মাথা ধরা, কম্পন প্রভৃতি লক্ষণে দিতে হবে-জেলসিমিয়াম ১০।

6) ফুসফুস প্রদাহে ফসফরাস বা অ্যান্টিম টার্ট উপকারী।

7) ফুসফুসে রক্ত সঞ্চয় হলে, ব্রায়োনিয়া ৬, ৩০

8) ব্রঙ্কাইটিস্ হলে ব্রায়োনিয়া, ক্যালি বাইক্রোম বা অ্যান্টিম টার্ট ৬, ৩০।

9) শোথ, চোখ বুজে থাকা, গলা ফোলা প্রভৃতিতে, এপিস্ বা বেল ৬।

10) প্রলাপ ও প্রবল জ্বরে হায়োসায়ামাস, বেলেডোনা, স্ট্যামোনিয়াম বা ভিরেট্রাম ভির ৩, ৬ বা ৩০

11) হঠাৎ অবসন্ন হয়ে পড়া বা মুচ্ছা লক্ষণে, ব্যাপটিসিয়া বা আর্সেনিক ৬।

12) চক্ষু প্রদাহ হলে, মার্ক কর ৬।

13) স্ফোটক হলে হিপার সালফাব ৬. ফসফবাস ৬ বা সালফাব ৬।

14) গুটিগুলি হঠাৎ বসে গিয়ে হিমাঙ্গ, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি হলে বুবিনীর ক্যাম্ফার মাদার ঈষদুষ্ণ জলে ৩-৪ ফোঁটা পনেবো মিনিট অন্তর।

আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা

1) বোগীকে পৃথক ঘবে মশারীর মধ্যে শুইয়ে রাখা কর্তব্য যাতে রোগ অন্যত্র না ছড়ায়।

2) উচ্ছে বা করলাপাতার রস বা উচ্ছে সিদ্ধ দিনে ২ বার খেতে দিলে উপকার হয়।

3) রোগীর পোষাকাদি ও বিছানাপত্র পৃথক ও পবিষ্কাব রাখা অবশ্য কর্তব্য।

4) গুটি ঠিক মতো বের না হলে, দেহে সর্বত্র স্পঞ্জ করতে হবে। তাতে গুটি সব বের হয়ে যায়।

5) রোগী যাতে গা-হাত-পা চুলকিয়ে গুটি না গলিয়ে ফেলে, সেদিকে নজর রাখা অবশ্য কর্তব্য।

6) সাগু, বার্লি, প্রোটিনেক্স দেওয়া ভাল। হরলিকস, দুধ ও গ্লুকোজ পথ্য। হাইড্রোপ্রোটিন বা গুটি শুকিয়ে গেলে মাছ, ডিম, ছানা প্রভৃতি প্রোটিন খাদ্য খেতে দিতে হয়।

7) রোগীর ঘর নিয়মিত ফিনাইল, রিচিং পাউডার বা লাইজল প্রভৃতি বীজাণু নাশক ঔষধ দিয়ে বীজাণু শূন্য করা কর্তব্য।

 ডাঃ এসএন পান্ডে এর হোমওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স গাইড থেকে হুবহু সংকলিত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url